Ranchi tourist place - রাঁচি ভ্রমন

লিখেছেন ~ Uma guha

Ranchi tourist place - রাঁচি ভ্রমন
Ranchi tourist place - রাঁচি ভ্রমন


বার্ধক্যের দ্বারপ্রান্তে আসার পর কাউকে উচ্ছ্বল, প্রাণচঞ্চল ঋতুমতী , উদ্ভিন্নযৌবনা হতে দেখেছো ? নাহ, এ জাদুকারী কোন মানুষের কাছে নেই, আছে একমাত্র প্রকৃতির কাছে ।

শীতের মরা নদী , বর্ষায় কেমন পূর্ণযৌবনা হয়ে ওঠে, আর জলপ্রপাতগুলির উচ্ছল চঞ্চলা রূপ শুধু মুগ্ধ হয়ে উপলব্ধি করতে হয়। সেই কারণেই অনেকদিনের ইচ্ছে ভরা বর্ষায় জলপ্রপাতের শহর রাঁচি যাবার ।  শুকনো নদী আর সুতোর মতো জলপ্রপাত দেখলে আমার খুব কষ্ট হয়। আর নিজেকে কষ্ট দেওয়া কি ঠিক ? এদিকে আবার দুদিন ছুটি পেলেই মন বেয়াড়াপানা শুরু করে । ১০ থেকে ১৫ই আগস্ট এর মধ্যে ২ দিন ছুটি ম্যানেজ করতে পারলেই কেল্লা ফতে ... তাই আর দেরি করা ঠিক হবেনা।

Ranchi tourist place - রাঁচি ভ্রমন

 এর সঙ্গীসাথী  ~


রাঁচি যাবার সঙ্গীসাথীও জোগাড় হয়ে গেল । আমি, শান্তা, মৌসুমী, সিন্থিয়া ওর মেয়ে উইটি আর আমার মা । May মাসে ইউরোপ ট্যুর করে আসার পর বোনের পকেট গড়ের মাঠ, তাই ওকে আর বলিনি । কিন্তু আমাদের যাওয়ার খবর শুনে সে ও লাফিয়ে পড়ল , দলে তাই সুষমা আর ওর ছেলে পিকলু ও যুক্ত হলো ।

ট্রেনের টিকিট তো কাটা হলো। কিন্তু রাঁচি যাবো  আর নেতারহাট যাবো না , তাই কি হয় ? আর নেতারহাটে থাকার সবচেয়ে ভালো জায়গা ঝাড়খন্ড ট্যুরিজিমের 'প্রভাত বিহার' । অনলাইনে বহুবার বুক করার চেষ্টা করলাম, কিন্তু পেমেন্ট অপশনে গিয়ে বারবার আটকে যাচ্ছিল।এদিকে মাত্র চারটি ঘরই ফাঁকা আছে । অগত্যা পরদিনই ওদের কলকাতা অফিসে দৌড়ালাম বুকিং করে এলাম ।

বুকিং শেষে দিন গোনার পালা শুরু ।
এর মধ্যে অনলাইনে প্রথম দিনের জন্য হোটেল বুকিং টাও সেরে ফেললাম।

১০ই আগষ্ট
দেখতে দেখতে এসে গেল যাওয়ার দিন । রাত ১০:১০ এ ক্রিয়াযোগ । আমাদের এখান থেকে ৬:২৭ এর মাঝেরহাট লোকালে চেপে নামলাম বি.বা.দি. বাগ। এবার লঞ্চে উঠে  সন্ধ্যার হাওয়া আর আলোকিত গঙ্গার শোভা দেখতে দেখতে হাওড়া। বেশ তাড়াতাড়ি পৌঁছে গেলাম, ভিড়ভাট্টা এড়িয়ে ।

সাড়ে আটটা নাগাদ food প্লাজায় গিয়ে ধোসা দিয়ে রাতের খাবারটাও সেরে নিলাম । একে একে সবাই এসে গেল ।এদিকে সাড়ে নটা বাজতে চলল, কিন্তু ট্রেনের কোন খবর নেই । অনুসন্ধানে  খোঁজ নিয়ে জানলাম ট্রেন ২৩ নং প্লাটফর্ম এ দেবে । মালপত্তর নিয়ে চললাম সেদিকে ।
ট্রেন মিনিট কুড়ি দেরিতে ছাড়লো । খানিক গল্পগুজব করে শুয়ে তো পড়লাম কিন্তু দরজার পাশে সিট পড়ায় ঘুম হলো না । মাঝে মাঝে চোখ খুলে নিঃশব্দ রাতের রূপ দেখছি । একে একে খড়গপুর, ঝাড়গ্রাম, ঘাটশিলা পার করে টাটানগরে অনেকক্ষন দাঁড়ালো ।

১১ই আগষ্ট
ভোরবেলায় পৌঁছালো মুড়ি ।এখানে কি মুড়ি তৈরীর কারখানা আছে, নাকি এখানের সব্বাই কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমায় ? ... জানা নেই । এমন অদ্ভুত প্রশ্ন করার মতো যুৎসই কেউ চোখেও পড়লো না । যাইহোক, মুড়ি পার হতেই দৃশ্যপট বদলে গেল ... চারদিকে সবুজ বনানী, দূরে পাহাড় ... আহা,  এসবের টানেই তো বারবার ছুটে আসা । ফোটো তোলার লোভ সংবরণ করতে পারলাম না, এদিকে মোটা কাঁচের জানলা দিয়ে ফোটো তোলাও অসম্ভব। দরজা খুলে ছোট্ট একটা ভিডিও করলাম।

৭:২০ - ট্রেন ঢুকে পড়েছে রাঁচি, এবার নামার পালা। মেঘলা আকাশ, সাথে হাল্কা বৃষ্টিও হচ্ছে। স্টেশনের বাইরে এসে দাঁড়ালাম। গাড়ি ঠিক করা ছিল, ড্রাইভারকে ফোন করাতে ১০ মিনিটের মধ্যে এসে পড়লো ।

৮ টা নাগাদ হোটেলে (কুবের প্যালেস) পৌঁছে , ফার্মালিটি সেরে চা এর অর্ডার দিয়ে ঘরে গেলাম । একদিনের ব্রেকফাস্ট ফ্রী ছিল। পরদিন সকালেই বেরোতে হবে বলে আজই সেটা দিতে বললাম । ব্রেকফাস্ট দিতে একটু দেরীই করল, ফলে আমাদের বেরোতে ও দেরী হয়ে গেল । এদিকে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি ও এলো ।

#Ranchi tourist place - রাঁচি ভ্রমন এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো রাজরাপ্পা দর্শন 

Ranchi tourist place - রাঁচি ভ্রমন
Ranchi tourist place - রাঁচি ভ্রমন
দেবী ছিন্নমস্তা মন্দির রাজরাপ্পা তে।


আজ রাঁচি ঘোরার প্রথমদিন। প্রায় ১১ নাগাদ বেরিয়ে প্রথমে গেলাম রাজরাপ্পা। দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার, ঘন্টা দুয়েক সময় লাগলো যেতে । এখানে মা ছিন্নমস্তার মন্দির, তান্ত্রিকমতে পূজা হয়,খুবই জাগ্রত দেবী।  মূল মন্দির ছাড়াও আরো দশটি মন্দির আছে বিভিন্ন দেবদেবীর । এখানে পশুবলিও দেওয়া হয়। সেই মাংস ভোগ হিসেবে খাওয়ানো হয় । যদিও ব্যক্তিগতভাবে আমি যে কোনপ্রকার বলির বিরোধী। দেবীর পায়ে বলি দিতে হলে নিজের আত্ম অহংকার, নৃশংসতা, পরশ্রীকাতরতা, ঈর্ষা, ঘৃণা... এসব বলি দেওয়াই শ্রেয় ।

মৌসুমীর পুজো দেবার ইচ্ছে ছিল, ও গেল পুজো দিতে । এদিকে ছোট সদস্যদের প্রিয় আ্যডভেঞ্চার ... মন্দির ঘোরার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে নেই তাদের । কিন্তু এখানে আ্যডভেঞ্চার পাই কোথা থেকে ? ও মা ! একটু এগোতেই দেখি ডানপাশে  ঝরঝর কলকল করে বয়ে চলেছে এক নদী ... চললাম নদীর পাড়ে । বর্ষায় জলে ক্ষিপ্রগতি ভৈরবী ( স্থানীয় নাম ভেরা) এখানে ৩০ফুট উপর থেকে দামোদরের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে এক জলপ্রপাতের সৃষ্টি করেছে । বর্ষায় দামোদরও টইটম্বুর , তাই উচ্চতা ৩০ফুট বলে মনে হচ্ছিল না।

এ পাথর, ও পাথর ডিঙিয়ে ডিঙিয়ে  আমরা প্রথমে ভৈরবীর সাথেই কিছু ফটো তুললাম । বাচ্চদেরও বেশ আ্যডভেঞ্চার হলো। তারপর উঠে পড়লাম নৌকায় । অনেকক্ষণ আগেই বৃষ্টি বিদায় নিয়েছে... এবার প্রচন্ড রোদ , এদিকে নৌকায় ছাউনিও নেই। অগত্যা ছাতা মাথায় দিয়ে বসতে হলো । নৌকা আমাদের নিয়ে গেল সেই জলপ্রপাতের অনেক কাছে । বেশ করে ফটো তুললাম । ইতিমধ্যে মৌসুমীর ও পুজো হয়ে গেছে । আমাদেরও নৌবিহার শেষ । ওখানে খাওয়ার কথা বলা হয়েছিল কিন্তু প্রায় আধঘন্টা অপেক্ষা করার পর শোনা গেল আরো ৪৫ মিনিট থেকে এক ঘন্টা দেরী হবে। এখানে খেতে গেলে আজ আর কিছুই দেখা হবেনা । ওখান থেকে বেরিয়ে পড়লাম আমাদের পরবর্তী গন্তব্য 'হুন্ড্রু ফলস' এর উদ্দেশ্যে ।

কেমন লাগছে আমাদের Ranchi tourist place - রাঁচি ভ্রমন ।
কমেন্টে জানান।
ক্রমশঃ ...
************************
দ্বিতীয় পর্বের লিঙ্ক CLICK করুন