keonjhar tour plan - কেওনঝাড় ভ্রমণ

লিখেছেন - Mou Nisha 


keonjhar tour plan - কেওনঝাড় ভ্রমণ
keonjhar tour plan - কেওনঝাড় ভ্রমণ


আমরা ১৬জন মিলে গত ১৫ই আগস্ট ভ্রমণ এর উদ্দেশ্যে আমাদের যাত্রা শুরু করেছিলাম পাহাড়ি ঝর্ণার দেশ কেওনঝাড় এর পথে। আমাদের ট্রেন ছিল রাত ১১:৩০ অমরাবতী এক্সপ্রেস। আমরা সবাই মিলিত হয়েছিলাম হাওড়া স্টেশন এর নিউ ১৯ নম্বর পলাটফরম এ দিন টা ছিল রাখি বন্ধন এর তাই আমরা সবাই নিজেদের এই বন্ধন কে আরও দৃঢ় করতে একে অপরের হাতে বেঁধে দিলাম এই মৈত্রী বন্ধন আর সাথে হলো মিস্টি মুখ তারপর শুরু হলো আমাদের যাত্রা ।

ট্রেন ছুটে চললো তার আপন গতিতে ঘড়ির কাঁটা তখন ৪:১৫ ছুঁয়েছে আমরা নিজেদের লাগেজ নিয়ে নামলাম জাজপুর স্টেশন এ সেখানে কিছুখন অপেক্ষা করলাম আমরা সবাই কারণ স্টেশন এর পাশেই আমাদের একটা হোটেলে ৫টা রুম বুকিং ছিল কয়েক ঘন্টা র জন্য কারন সারা রাত ট্রেন যাত্রা করে সকলের একটু রিফ্রেশ হবার দরকার ছিল তাই খানিক ক্ষণ বাদে ওই হোটেলের একজন দাদা এসে আমাদের নিয়ে গেলেন। যে যার নির্ধারিত রুমে গিয়ে একটু বিশ্রাম গল্প এর মধ্যে দিয়ে একটু সময় অতিবাহিত করে যে যার মত ফ্রেশ হয়ে নিয়ে পাশের একটি দোকান এ প্রাতরাশ সেরে নিলাম ততক্ষণ এ আমাদের বুকিং গাড়ি এসে গিয়েছিল।

 আমরা হোটেলের রুম ছেড়ে দিয়ে যে যার মত গাড়িতে উঠে পড়লাম শুরু হলো আমাদের যাত্রা গুণডিচাঘাই জলপ্রপাত এর দিকে যাওয়ার পথে থামলাম আমরা তারিণী মন্দির এ হাতে বিশেষ সময় না থাকায় আমরা কেউই পুজো দিতে পারিনি তাই শুধু মন্দির এর ভিতর গিয়ে দর্শন করেছিলাম সবাই আর মন্দির এর ভিতর ফটোগ্রাফি নিষেধ ছিল তাই মন্দির এর বাইরে কিছু ফটোগ্রাফি করলাম আমরা। মন্দির এর পরিবেশ টা অসাধারন বিভিন্ন ধরনের সবুজ গাছপালা দিয়ে ঘেরা আর চারিদিকে নারকেল এর মেলা।
keonjhar tour plan - কেওনঝাড় ভ্রমণ

keonjhar tour plan - কেওনঝাড় ভ্রমণ


সেখান থেকে বেরিয়ে আবার গাড়ি চলতে শুরু করল সবুজে মোরা প্রকৃতির মধ্যে দিয়ে আর সাথে অনুভব করছিলাম অজানা কোন কিছু কে জানার এক হাতছানি অবশেষে দেখা মিলল তার ওই তো এসে গেছি আমরা গুণডিচাঘাই জলপ্রপাত এ তো ঠিক যেন পাহাড়ের মাঝে এক টা রুপকথার দেশ যেখানে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে জল আর হাওয়ার গান একসাথে আর তাই আনন্দে মন বলে উঠছে

"দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া
ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া"

গুনডিচাঘাই এর অপরুপ সৌন্দর্য এ‌ মুগ্ধ হয়ে আমরা সবাই যেন হারিয়ে গিয়েছিলাম এক অনাবিল আনন্দ এর মধ্যে দিয়ে আর সেই আনন্দ ধারায় ভেসে থাকতে গিয়ে আমরা আবিষ্কার করলাম নতুন এক কেওনঝাড় কে ছোট বেলায় পড়া ভূগোল বই যাকে আমাদের কাছে খনিজ সম্পদ এর অঞ্চল বলে উপস্থাপিত করেছিল আজ আমরা স্বচক্ষে তাকে আবিস্কার করলাম নতুন এক সৌন্দর্যের খনি হিসাবে যেখানে প্রকৃতি পাহাড় ঝর্ণা সব‌ মিলে মিশে একাকার হয়ে নিজেদের রুপ উজাড় করে দিয়েছে। বেশ কিছুটা সময় সেখানে অতিবাহিত করলাম কিন্তু সময়ের কাছে আমরা সবাই বাঁধা তাই গুনডিচাঘাই এর অপরুপ সৌন্দর্য রস উপভোগ করার সাথে সাথেই এ দেখা শেষ দেখা নয়তো বলে আমরা তাকে বিদায় জানিয়ে গাড়ির দিকে পা বাড়ালাম ভীমকুনড এর উদ্দেশ্যে যাবার জন্য।

keonjhar tour plan - কেওনঝাড় ভ্রমণ
keonjhar tour plan - কেওনঝাড় ভ্রমণ


 তারপর আবার সবুজ চাদরে মোড়া প্রকৃতির মধ্যে দিয়ে ছুটে চললাম এ ভীমকুণড এর পথে যেইখানে পৌঁছে গিয়ে দেখলাম প্রকৃতি তার ‌আপন ছন্দে বয়ে চলেছে এরপর আমরা ফিরে এলাম আমাদের হোটেলে পান্থ নিবাস এর উদ্দেশ্যে যেখানে আমাদের আগে থেকেই ফোন করে বুকিং করা ছিল। ফেরার পথে এক জায়গায় থেমে আমরা লাঞ্চ সেরে নিলাম। হোটেলের রুম এ সবাই ফ্রেশ হয়ে নিয়ে শুরু হলো আমাদের সান্ধ্য আড্ডা  এরপর যে যার মত ডিনার সেরে রাতে ঘুমাতে গেলাম। আগে‌ থেকেই ড্রাইভার দাদা কে জানানো ছিল যে পরের দিন সকাল ৮,৩০এ আমরা রওনা দেব মোহময়ী খন্ডধার এর উদ্দেশ্যে। সেইমত সকাল এ উঠে ব্রেকফাসট সেরে নিয়ে আমরা বেরিয়ে পড়লাম। যাওয়ার পথ টা ছিল ভারি মনোরম কখনও জঙ্গল কখনও উপত্যকা এর মধ্যে দিয়ে কোন এক অচিনপুর এর দিকে এগিয়ে চলেছি আমরা যেখানে কিছু আদিবাসী মানুষ দের সহজ সরল দিন যাপন, কিছু শীর্ণকায় বাচ্চাদের দৌড়ে বেড়ানো আবার কখনও বা একপাল গরু নিয়ে রাখালের ছুটে চলা এ সব কিছুর আনাগোনা এর ই মধ্যে হঠাৎ করে চোখে পড়লো আরে ওই তো সেই মোহময়ী খন্ডধার যে পাহাড় আর জঙ্গল এর মাঝে আপন মনে লুকোচুরি খেলছে আর উপর থেকে তার সাদা রং এর জলধারা নীচে নেমে আসছে। এরপর বেশ কিছুটা রাস্তা হেঁটে আর কিছু সিড়ি বেয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতেই পেলাম এক অনন্য অনুভূতির ছোঁয়া আর সাথে সাথে মুগ্ধতায় চোখ জুড়িয়ে গেল অতো উপর থেকে জলের ধারা সশব্দে ঝরে পড়ছে পাথরের উপর আর হাওয়ার সাথে সঙ্ঘাত এ ছড়িয়ে পড়েছে আরও চারিদিকে আর নীচে তৈরি হয়েছে এক সবুজ জলাধার।
keonjhar tour plan - কেওনঝাড় ভ্রমণ
keonjhar tour plan - কেওনঝাড় ভ্রমণ


সবকিছু যেন ভুলে গিয়ে আমরা কজন সেই ঝর্ণা ধারায় সিক্ত হলাম আর আমাদের মন ময়ূরের মত নেচে উঠল। বেশ কিছুটা সময় খন্ডধার এর সাথে একান্ত আলাপচারিতায় অতিবাহিত করে একরাশ আনন্দ সঞ্চার করে আমরা লাঞ্চএর জন্য ফিরে এলাম হোটেলের দিকে কিন্তু বহুখন অবধি খন্ডধার এর সেই মধুর কলতান এর রেশ মনে রয়ে গেল। এরপর আমরা বেরালাম হান্ডিভাঙা এর উদ্দেশ্যে ততখনে বেশ ভালোই বৃষ্টি নেমেছে আর যাওয়ার রাস্তা টাও ছিল বেশ অমসৃণ অবশেষে যখন পৌঁছলাম তখন প্রায় ৫টা মন্দির এর দরজা বন্ধ হয়ে গিয়েছে যেটা ছিল হান্ডিভাঙার মেন প্রবেশ পথ তাই দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে আমরা পাহাড়ি ঝোড়ার সামনে দাঁড়িয়ে দুর থেকে হান্ডিভাঙা কে উপভোগ করে ফিরে এলাম হোটেলের পথে কিন্তু কোথাও যেন একটা না পাওয়ার দুঃখ রয়ে গেল মনে।

বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যায় গরম কফির কাপে চুমুক দিয়ে আবার জমে উঠল শেষ বেলার আড্ডা সকলের কম বেশি মন খারাপ কারন রাত পোহালেই ঘরে ফেরার পালা। রাতে তারাতারি ডিনার সেরে নিয়ে যে যার মত ঘুমিয়ে পড়লাম। পরের দিন সকাল ৭,৩০ নাগাদ আমরা  নিজেদের লাগেজ নিয়ে গাড়িতে উঠে হোটেলে পান্থ নিবাস কে বিদায় জানিয়ে যাত্রা শুরু করলাম। কিন্তু ওই যে বলে শেষ হয়ে ও হইল না শেষ আমরা পৌঁছে গেলাম কানঝাড়ি ‌ড‍্যাম এ আর দেখলাম বৃষ্টি তে তার পরিপূর্ণ রুপ আর শেষ মুহূর্তের আনন্দ এর নির্যাস টুকু নিঙড়ে নিতে বৃষ্টি তে ভিজতে ভিজতে সবাই গেয়ে উঠলাম

"আজি ঝর ঝর মুখর বাদল দিনে"

ষোল আনা পরিপূর্ণতা পেল আমাদের বৃষ্টি তে ভেজা বর্ষা ট্রিপ গাড়িতে উঠে আমরা রওনা দিলাম  জাজপুর স্টেশন এর দিকে আর সাথে বললাম

"আসব আর এক দিন
আজ যাই"

সমাপ্ত